গৌরনদীর পূজা মন্ডপের প্রায় ৩ লক্ষাধিক টাকা সভাপতি – সম্পাদকের পেটে

গৌরনদী প্রতিনিধি :
আসন্ন শারদীয় দূর্গা পূজা উপলক্ষ্যে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার ৮৫টি পূজা মন্ডপে সরকারী বরাদ্দকৃত সাড়ে ৪২ মেট্রিকটন চাল সংশ্লিষ্ট কতিপয় কর্মকর্তার যোগসাজসে সিন্ডিকেট এর মাধ্যমে কালো বাজারে কম দরে বিক্রি করে প্রায় ৩ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেয়ায় অভিযোগ উঠেছে পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি ও সম্পাদকের বিরুদ্ধে। এতে করে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে চাপা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্যমতে জানাগেছে, চাল মধ্যম মান (সিদ্ধ) (ব্রি ধান-২৮, ব্রি ধান-২৯, বিআর-২৩ ইত্যাদি) প্রতি কেজি চালের পাইকারি বাজার মূল্য ৪৮ থেকে ৫৩ টাকা এবং প্রতি কেজি আটার পাইকারি বাজার মূল্য ৩৬ টাকা। তবে স্থানীয় পূজা মন্ডপের একাধিক সভাপতি/সম্পাদকের অভিযোগ উপজেলার ৮৫টি পূজা মন্ডপে সরকারীভাবে সাড়ে ৪২ মেট্রিকটন চাল বিশেষ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এতে প্রতিটি পূজা মন্ডপে ৫০০ কেজি চাল বরাদ্দ পায়। বরাদ্দকৃত ৫’শ কেজি চাল ৩৮ টাকা দরে মোট ১৯ হাজার টাকায় কালো বাজারে বিক্রি করেন পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি দুলু রায় ও সাধারণ সম্পাদক মানিক লাল আচার্য্য। এবং পরবর্তীতে চাল বিক্রির টাকা থেকে পিআইও অফিস খরচ বাবদ ৫’শ টাকা কেটে রেখে প্রতিটি মন্ডপে ১৮ হাজার ৫’শ টাকা করে বিতরণ করেন তারা। এছাড়াও বরাদ্দকৃত চাল বিক্রির টাকা বিতরণের ৪/৫ দিন পূর্বে সেচ্ছাসেবক কার্ড সরবারহের নামে মন্ডপ প্রতি ৫’শ টাকা করে কেটে দুই বারে মোট ৮৫ হাজার টাকা বাগিয়ে নেয় এই চক্র।
তারা আরও অভিযোগ করেন, চাল উত্তোলনের জন্য গত ৫ই অক্টোবর সকাল ৯টা থেকে বিকাল পর্যন্ত উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে তাদের কাছ থেকে প্রকল্পের কাগজপত্রে ৪/৫টি করে স্বাক্ষর গ্রহন করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এবং শেষে চালের ন্যয্য মূল্য না দিয়ে (সরকারী নির্ধারিত) কালো বাজারে কম দরে চাল বিক্রির নগদ ১৮ হাজার ৫’শ টাকা করে প্রতিটি মন্ডপে বিতরণ করা হয়। পিআইও অফিস ও খাদ্যগুদাম কর্মকর্তাদের যোগসাজসে পূজা উদযাপন কমিটি এমন অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিবাদ করতে সাহস পাননি কোন স্থানীয় পূজা কমিটিই।
গোলার পাড় মহাভারত সাহা বাড়ি পূজা মন্ডপের সভাপতি সন্তোষ সাহা আক্ষেপ করে বলেন, গত বছর চালের দাম কম থাকা সত্বেও আমরা চাল বিক্রির টাকা ও এমপি তহবিল মিলিয়ে প্রতিটি মন্ডপে ৩১ হাজার ৫’শ টাকা করে পেয়েছি। তবে এবার চালের দাম বেশি এবার পেয়েছি ১৮ হাজার ৫’শ টাকা। চালটা যদি নিজেরাও বিক্রি করতাম তাহলে হয়ত ৪/৫ হাজার টাকা বেশি পেতাম।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে গৌরনদী উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি দুলু রায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রতিদিন আমাদের ২/৩ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। এ পর্যন্ত পূজা উদযাপন কমিটির ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। সে কথা তো সাংবাদিকদের কেউ জানালো না। এখন স্বেচ্ছাসেবীদের কার্ড বাবদ ৫’শ টাকা কেটে নেওয়া হলো তখন সবাই সাংবাদিকদের জানায়। তাছাড়া পূজা মন্ডপের সভাপতি/সম্পাদকদের সর্ব সম্মতিক্রমে বরাদ্দকৃত সরকারী চাল বিক্রি করা হয়েছে। আগৈলঝাড়ায় প্রতি মন্ডপে ১৮ হাজার করে টাকা দেয়া হয়েছে আর গৌরনদীর প্রতি পূজা মন্ডপের চাল ১৮ হাজার ৫’শ টাকা দরে বিক্রি করা হয়েছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ সালাউদ্দিন অভিযোগ অস্বীকার বলেন, আমি চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকায় থাকার কারণে আমি এ ব্যপারে কিছুই জানি না। উপজেলা খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা শেখ মুহাম্মদ শিহাব উদ্দীন অভিযোগ অস্বীকার বলেন, যে সকল পূজা মন্ডপের সভাপতি/সম্পাদকরা হাটতে পরেন তারা খাদ্য গুদামে এসে স্বাক্ষর দিয়ে চাল উত্তোলন করে নিয়ে গেছেন। আর যারা হাটতে পারেন না তারা উপজেলায় গিয়ে স্বাক্ষর দিয়ে চাল চাল উত্তোলন করেছেন। কে বা কারা চাল বিক্রি করেছেন বা কিনেছেন আমি এব্যপারে কিছুই জানি না।
গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, আমার জানামতে গৌরনদী উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটি চালের বাজার দর যাচাই বাচাই করে পাশ্ববর্তী উপজেলা আগৈলঝাড়া, উজিরপুরের মন্ডপ গুলোতে যত টাকা বিতরণ করেছেন। সেই সমপরিমান টাকা তারাও বিতরণ করেছেন।
Share this content:
Post Comment