Loading Now

গৌরনদী ইউএনও’র হস্তক্ষেপে ফিরলো ন্যায্যতা, হাসলো মৎস্যজীবী পরিবার।

print-news গৌরনদী ইউএনও’র হস্তক্ষেপে ফিরলো ন্যায্যতা, হাসলো মৎস্যজীবী পরিবার।

আরিফিন রিয়াদ, গৌরনদী (বরিশাল):সরকারি প্রকল্পে বাছুর বিতরণে অনিয়মের গন্ধ পাওয়া মাত্রই কঠোর অবস্থান নিয়েছেন বরিশালের গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক রিফাত আরা মৌরি।

মৎস্যজীবীদের জন্য বরাদ্দ ৬৫টি বকনা বাছুর শারীরিকভাবে দুর্বল ও ওজনে কম হওয়ায় তিনি তাৎক্ষণিকভাবে বিতরণ কার্যক্রম স্থগিত করে সরবরাহকারী ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে তা ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেন। তার এই সাহসী ও সময়োপযোগী পদক্ষেপে প্রকল্পের স্বচ্ছতা যেমন নিশ্চিত হয়েছে তেমনি ফিরে এসেছে মৎস্যজীবী পরিবারের মুখে ন্যায্যতার হাসি।

জানা গেছে, মঙ্গলবার (২০ মে) ‘দেশীয় প্রজাতির মাছ ও শামুক সংরক্ষণ ও উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায় উপজেলা পরিষদ চত্বরে মৎস্যজীবী পরিবারের জন্য বাছুর বিতরণের আয়োজন করা হয়। তবে বিতরণ শুরুর আগেই নির্বাহী কর্মকর্তা রিফাত আরা মৌরি উপস্থিত হয়ে প্রতিটি বাছুরের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন। দেখা যায় গড় ওজন নির্ধারিত ৭০ কেজির পরিবর্তে অধিকাংশ বাছুরের ওজন ৫০ থেকে ৫৫ কেজি এবং কিছু বাছুর ছিল শারীরিকভাবে অসুস্থ ও দুর্বল।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রসেনজিৎ দেবনাথ জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বাছুরগুলো নিজে পর্যবেক্ষণ করে মানগত অসঙ্গতি পাওয়ায় সঙ্গে সঙ্গে বিতরণ বন্ধ করে দেন। পরে সেগুলো ফেরত পাঠানো হয়।

অন্যদিকে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, দিনাজপুর থেকে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে আসার কারণে পরিবহনে ওজন কিছুটা কমেছে। তবে নির্বাহী কর্মকর্তা রিফাত আরা মৌরী এই ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট হননি এবং মানসম্মত পশু সরবরাহের নির্দেশনা দেন।

স্থানীয় প্রশাসনের এমন কার্যকর হস্তক্ষেপ ইতোমধ্যে সাধুবাদ কুড়িয়েছে এলাকাবাসীর। বিশেষ করে উপজেলায় বসবাসকারী মৎস্যজীবী পরিবারগুলো নির্বাহী কর্মকর্তা এই অবস্থানকে তাদের জন্য ‘অধিকারের বিজয়’ বলে মন্তব্য করেছেন।

স্থানীয় এক জেলে বলেন, সাধারণত আমাদের কেউ এসব নিয়ে মাথা ঘামায় না। কিন্তু এবার ইউএনও স্যার নিজে মাঠে নেমে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। সামনের দিনে কেউ যেন সাহস না পায় নিম্নমানের বাছুর দিয়ে প্রতারণা করতে, সেটা তিনি নিশ্চিত করেছেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ছাগলছানা ও বাছুর বিতরণ প্রকল্পে দীর্ঘদিন ধরেই অনিয়ম চলছিল। কম ওজনে পশু সরবরাহ, অসুস্থ বাছুর বিতরণসহ নানা অভিযোগ থাকলেও তা আমলে নেওয়া হতো না। কেউ প্রতিবাদ করলে বরং হয়রানির শিকার হতে হতো। এবার সেই চিত্র পাল্টেছে।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতেও একই প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগে তৎকালীন নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবু আবদুল্লাহ খান বিতরণ বন্ধ করেছিলেন এবং পরে মানসম্মত বাছুর সরবরাহ হলে সেগুলো বিতরণ করা হয়।

প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের মতে, রিফাত আরা মৌরি’র সাহসী ও আপসহীন ভূমিকা গৌরনদীতে প্রকল্প বাস্তবায়নে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার নবদিগন্ত উন্মোচন করেছে। তারা আশা করছেন, এই নজির ভবিষ্যতেও বজায় থাকলে প্রকৃত সুবিধাভোগীরাই প্রকল্পের সুফল পাবে এবং দুর্নীতিবাজদের শিকড় উপড়ে ফেলা সম্ভব হবে।

Share this content:

Post Comment

অন্যান্য সংবাদ