Loading Now

গৌরনদীর ঐতিহাসিক মাজারের নাম বিকৃতি ; সরকারি তথ্য বিভ্রাটে ক্ষোভে ফুঁসছে স্থানীয়রা

print-news গৌরনদীর ঐতিহাসিক মাজারের নাম বিকৃতি ; সরকারি তথ্য বিভ্রাটে ক্ষোভে ফুঁসছে স্থানীয়রা

 

***প্রতিষ্ঠার ৫০০ বছর পর যুক্তহলো ‘শাহ্’ পদবি***

 

গৌরনদী (বরিশাল) প্রতিনিধি : 
বরিশালের গৌরনদী উপজেলার লাখেরাজ কসবা গ্রামের প্রাচীন ইসলাম প্রচার কেন্দ্র হযরত মল্লিক দুত কুমার (রহ.) এর মাজারের নাম নিয়ে সম্প্রতি তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, মাজারের ঐতিহাসিক নাম ‘হযরত মল্লিক দুত কুমার পীর সাহেব (রহ.)’ বিকৃত করে সরকারি ওয়েবসাইটসহ বিভিন্ন স্থানে ‘হযরত শাহ্ মল্লিক দুত কুমার পীর সাহেব (রহ.)’ নাম ব্যবহার করা হচ্ছে যা প্রতিষ্ঠিত ইতিহাস-ঐতিহ্যের পরিপন্থী। তাদের দাবি, একটি স্বার্থান্বেষী মহল নিজেদের পীরের বংশধর প্রমাণের অপচেষ্টায় ইচ্ছাকৃতভাবে ‘শাহ’ উপাধি যুক্ত করে প্রশাসনকে বিভ্রান্ত করছে অথচ মাজারের শিলালিপি ও স্থানীয় ইতিহাসের সঙ্গে ‘শাহ’ পদবির কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।

মাজারটির শিলালিপি, ইতিহাস অনুযায়ী মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীরের শাসনামলের পূর্বে ইয়েমেনের বাদশাহর দ্বিতীয় পুত্র হযরত মল্লিক দুত কুমার (রহ.) ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে বরিশাল-ফরিদপুর অঞ্চলে আসেন। পরে গৌরনদীর কসবা গ্রামে স্থায়ী হয়ে তিনি ইসলাম প্রচারে আত্মনিয়োগ করেন। বাংলা ৮৯০ সনে তাঁর ইন্তেকালের পর এই এলাকায় তাঁর মাজার প্রতিষ্ঠিত হয় যা অঞ্চলটির অন্যতম পুরনো ইসলামী স্থাপনা হিসেবে স্বীকৃত। পাঁচ শতাধিক বছরের পুরনো এই মাজার স্থানীয় মুসলিমদের কাছে এক গুরুত্বপূর্ণ আধ্যাত্মিক কেন্দ্র যা পীরের ঐতিহাসিক ও অলৌকিক স্মৃতিতে পরিপূর্ণ। প্রতি বছর ২৭ ও ২৮ ফাল্গুন ওরশ উপলক্ষে হাজারো ভক্তের সমাগম ঘটে এ মাজারে।

ইতিহাসে উল্লেখ রয়েছে হযরত মল্লিক দুত কুমার (রহ.) এর জীবদ্দশায় মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীর কসবা সফরে এসে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ১৬ দরুণ ১৩ কানি লাখেরাজ (কর মুক্ত) জমি তাঁকে দান করেন যা বর্তমানে প্রায় ১৬৫ একর। আর এই জমির ভিত্তিতেই এলাকার নামকরণ হয় ‘লাখেরাজ কসবা’। পীর সাহেব নিজ হাতে এখানে গোয়ালিয়া, মালি, পদ্ম বুনিয়া ও মাঝের আন্ধি নামক কয়েকটি দিঘি খনন করেন যেগুলোর অনেক অংশ আজ বিলুপ্তপ্রায়।

অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য প্রবীণ ব্যক্তি আবদুল জলিল সরদার বলেন, মাজারের নাম আমরা ছোটবেলা থেকেই ‘হযরত মল্লিক দুত কুমার পীর সাহেব (রহ.)’ হিসেবেই জানি এবং শিলালিপিতেও এই নামই খোদাই করা রয়েছে। এখন কিছু লোক ইচ্ছাকৃতভাবে নিঃসন্তান পীরের নামের সাথে ‘শাহ’ পদবি যোগ করে নিজেদেরকে তাঁর বংশধর প্রমাণের মাধ্যমে ফায়দা লুটতে চাইছে। তাই স্বার্থান্বেষী মহলটি প্রশাসনকে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে সরকারি ওয়েবসাইটে তাঁর নাম ‘হযরত শাহ মল্লিক দুত কুমার’ হিসেবে প্রকাশ করিয়েছে। এটা শুধু ইতিহাস বিকৃতি নয়, বরং ধর্মীয় বিশ্বাসের ওপরও আঘাত। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

স্থানীয় বাসিন্দা নুরউদ্দীন বুদ্ধি বলেন, মাজারের নাম পরিবর্তন শুধু একটি নাম রদবদল নয়, বরং এটি ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অবমূল্যায়ন। এমন উদ্যোগ ধর্মপ্রাণ মানুষের অনুভূতিতে আঘাত হানছে। সরকারের প্রতি আহ্বান প্রকৃত ইতিহাস ও শিলালিপির ভিত্তিতে মাজারের নাম পুনঃস্থাপন করা হোক এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে ইতিহাস বিকৃতিকারীদের আইনের আওতায় আনা হোক।

গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিফাত আরা মৌরি বলেন, বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সরকারি ওয়েবসাইটে ভুল তথ্য থাকলে স্থানীয়দের আবেগ ও ইতিহাসের প্রতি সম্মান রেখে প্রমাণের ভিত্তিতে মাজোরের সঠিক নাম নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

Share this content:

Post Comment

অন্যান্য সংবাদ