গৌরনদীতে জনপ্রতিনিধিদের ‘শুভেচ্ছা রাজনীতি’: ফেইসবুকে ক্ষোভের ঝড়!

গৌরনদী (বরিশাল) সংবাদদাতা :
বরিশালের গৌরনদী উপজেলার নবাগত নির্বাহী কর্মকর্তা রিফাত আরা মৌরিকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা। প্রশাসনিক সৌজন্যের অংশ হিসেবে এই শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠিত হলেও বিষয়টি ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা ও সমালোচনার ঝড়।
জানা গেছে, সাবেক মেয়র হারিছুর রহমানকে কারাগারে বিশেষ সুবিধা দেওয়ায় তার ফাঁসির দাবিতে কয়েকদিন আগে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। এই ঘটনার জেরে গৌরনদীর রাজনৈতিক অঙ্গনে তৈরি হয়েছে চাপা ক্ষোভ ও উদ্বেগ। এই প্রেক্ষাপটে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া নবাগত নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে আওয়ামীলীগ দলীয় জনপ্রতিনিধিদের ফুলেল শুভেচ্ছা বিনিময়ের একটি ছবি নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এই ধরনের সৌজন্যমূলক আচরণ প্রশাসনিক রীতিনীতির স্বাভাবিক অংশ হিসেবে বিবেচিত হবে, নাকি এর মধ্যে রাজনৈতিক পক্ষপাত বা বার্তা নিহিত রয়েছে। তা নিয়ে নানা মহলে শুরু হয়েছে বিশ্লেষণ ও প্রতিক্রিয়া।
এই শুভেচ্ছাকে ‘আওয়ামী শুভেচ্ছা’ বলে অভিহিত করে পৌর যুবদল নেতা নুর উদ্দিন বুদ্ধি নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে তুলে ধরেছেন দলের ভেতরের ক্ষোভ ও হতাশা। সেখানে তিনি শহীদের আত্মত্যাগের চেতনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অভিযোগ আনেন এবং বিএনপির বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেন। তার ভাষায়, “শহীদ ইমরান, জামাল, ইলিয়াসরা যদি আজ বেঁচে থাকতেন, তাহলে এই আত্মসমর্পণমূলক রাজনীতি দেখে কী বলতেন?” তার অভিযোগ, বিএনপির অভ্যন্তরে কিছু সুবিধাবাদী নেতা আর্থিক লেনদেনের বিনিময়ে আওয়ামীলীগকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে পূর্ণ প্রতিষ্ঠার পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তারা দলটির নীতিগত অবস্থানকে দুর্বল করে দিচ্ছেন এবং এতে করে বিএনপি এক বিভ্রান্ত, দ্বিধান্বিত ও অন্তর্দ্বন্দ্বে নিমজ্জিত দলে পরিণত হচ্ছে।
এই শুভেচ্ছা জানানোকে যে যাই বলুক না কেন, আমরা কোনোভাবেই এর দায় এড়াতে পারি না উল্লেখ করে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল সম্প্রতি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে গভীর ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন, গৌরনদী-আগৈলঝাড়া একমাত্র এলাকা যেখানে ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসরদের দ্বারা তৃণমূল পর্যায়ের বিএনপি নেতাকর্মীরা সবচেয়ে বেশি নিগৃহীত ও নির্যাতিত হয়েছেন। অথচ আশ্চর্যের বিষয়, সেইসব ‘গুণধর’ চেয়ারম্যানরা এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন এমনকি তারা বীরের মত প্রকাশ্যে মহানায়কের মত নবনিযুক্ত নির্বাহী কর্মকর্তাকে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করে তাদের শক্তির জানান দিয়েছে।
স্ট্যাটাসে আত্মসমালোচনার সুরে তিনি লিখেছেন, আমরা কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ যারা গৌরনদী-আগৈলঝাড়ার সন্তান, আমরা তো সব সময় শহরে নিরাপদে অবস্থান করি কিন্তু সকল নির্যাতনের বোঝা বইতে হয় মাঠ পর্যায়ে কর্মরত তৃণমূল নেতাকর্মীদের।”
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে লিখেন, ভবিষ্যতেও যদি কোনো রাজনৈতিক সংকট বা বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়, তখনো কেন্দ্রের অনেক নেতারাই হয়তো নিরাপদে থাকবো, কিন্তু এইসব স্বৈরাচারের দোসর চেয়ারম্যানদের দ্বারা আবারো তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের চরমভাবে নিগৃহীত ও নির্যাতিত হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়।
অ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল সকল রাজনৈতিক অস্থিরতা ও দ্বন্দ্ব উপেক্ষা করে ঐক্যবদ্ধভাবে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমরা যারা কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ রয়েছি আসুন দলীয় ঐক্য বজায় রেখে এই পরিস্থিতিতে একটি সুস্পষ্ট অবস্থান গ্রহণ করি। আমরা যেন আমাদের মাননীয় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের স্বপ্নের বাংলাদেশ গঠনে দৃঢ় ভূমিকা রাখতে পারি এবং গৌরনদী-আগৈলঝাড়াকে একটি শান্তিপূর্ণ, সংগঠিত ও সচেতন রাজনৈতিক অঞ্চলে রূপান্তর করতে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করি।
তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতে, এই স্ট্যাটাস নিছক রাজনৈতিক আবেগ নয়, বরং এটি দলের ভিতরে বিদ্যমান বাস্তব সংকটের প্রতিফলন। তারা আশঙ্কা করছেন, যদি অভ্যন্তরীণ বিভক্তি এবং সুবিধাবাদীদের প্রভাব এখনই রোখা না যায়, তবে শুধু গৌরনদী নয়, সারাদেশেই বিএনপি নিজের সংগঠনিক শক্ত অবস্থান হারিয়ে ফেলতে পারে।
Share this content:
Post Comment