ছাত্রলীগ নিষিদ্ধে নয়, নেতার আত্মগোপনই কর্মীদের ক্ষোভ!

নিউজ ডেস্ক :
সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে আওয়ামীলীগের সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে নিষিদ্ধ করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তবে সংগঠনটি নিষিদ্ধ ঘোষণার আগেই বরিশালের গৌরনদী উপজেলা ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা গা ঢাকা দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে গৌরনদী উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান দ্বীপের আচরণ নিয়ে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে সংগঠনের তৃণমূল পর্যায়ে।
তৃণমূল কর্মীদের অভিযোগ, রাজপথ যখন উত্তপ্ত, যখন তারা নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। ঠিক সেই সময় সংগঠনের অন্যতম প্রধান নেতা লুৎফর কোনো রকম বার্তা না দিয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে গেছেন।
কর্মীদের দাবি, লুৎফরের সঙ্গে ফোন, হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার কোনো মাধ্যমেই যোগাযোগ করতে পারছে না তারা। এমনকি মেসেজ ‘সিন’ করার পরও তিনি কোনো উত্তর দেননি।
এদিকে লুৎফরের আত্মগোপন, দায়িত্বহীনতা ও নেতৃত্বহীন আচরণের কঠোর সমালোচনা করে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সংগঠনেরই কর্মী আনন্দ ইসলাম জিহাদ মিয়া। ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি সরাসরি অভিযোগ করেন, দল ক্ষমতায় থাকাকালীন লুৎফর রহমান দ্বীপ কোটি কোটি টাকা কামিয়েছেন অথচ কখনোই সাধারণ কর্মীদের পাশে তিনি দাঁড়াননি। এখন তো কথাই নেই, ক্ষমতায় থাকা অবস্থাতেও তার নেতৃত্বে একটি মিছিল, মিটিং বা সহমর্মিতার কোনো উদাহরণও কেউ দেখাতে পারবে না।
জিহাদ আরও অভিযোগ করেন, সংগঠনের সাধারণ কর্মীদের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা অভিযোগ তৈরি করে সাবেক মেয়র হারিছুর রহমানের কাছে নালিশ করা তার (লুৎফর) প্রধান কাজ। তার দাবি, কর্মীদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে তিনি নিজের রাজনৈতিক অবস্থানকে শক্ত করেছেন।
স্ট্যাটাসে জিহাদ উল্লেখ করেন, ৫ আগস্টের ঘটনার পর আমি সবকিছু হারিয়েছি। অথচ লুৎফর ক’জন কর্মীর খোঁজ নিয়েছেন? তার মধ্যে সামান্য সহানুভূতিও ছিল না।
দলের শাসনামলে ঘটে যাওয়া এক ঘটনার স্মরণ করে জিহাদ বলেন, একবার পাইলট স্কুলের সামনে একটি হোটেলে আপনি (লুৎফর) আমার কলার ধরে মারতে এসেছিলেন। আমিও আপনার পাঞ্জাবির কলার ধরেছিলাম। আমি বাবার জমি বিক্রি করে রাজনীতি করি। দলের নাম ভাঙিয়ে অর্থ কামাই না।
এছাড়াও, লুৎফর রহমান দ্বীপের পারিবারিক পটভূমি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন জিহাদ মিয়া। জিহাদের দাবি, লুৎফরের বাবা একসময় আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
গৌরনদী ছাত্রলীগের একাধিক কর্মী জানান, ভাই (লুৎফর) রাজনীতিকে ব্যবহার করেছেন নিজস্ব স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ার হিসেবে। আমাদের ব্যবহার করেছেন ঢাল হিসেবে। আজ যখন ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ, তখন আমরা আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছি আর তিনি অদৃশ্য। তবে এ বিষয়ে লুৎফর রহমান দ্বীপের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
গৌরনদী উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক রুবেল গোমস্তা বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সর্বদা গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ রাজনীতিতে বিশ্বাসী। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ছাত্রলীগের কিছু নেতা সেই পরিবেশকে বারবার প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। আজ যখন তাদের সংগঠন নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে তখন গৌরনদীর শীর্ষ স্থানীয় নেতারা হঠাৎ করেই অন্তরালে চলে গেছেন। এতে আর বলার অপেক্ষা থাকে না তারা রাজনৈতিক আদর্শ নয় বরং সুবিধাভোগী রাজনীতির অনুসারী। পালিয়ে যাওয়া দায়িত্বশীল নেতৃত্বের পরিচয় নয় এই ধরনের আচরণ রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির পরিপন্থী এবং নেতৃত্বের দেউলিয়াত্বের বহিঃপ্রকাশ।
স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ছাত্ররাজনীতি তখনই ফলপ্রসূ যখন নেতৃত্ব জবাবদিহিমূলক হয়। ক্ষমতায় থাকাকালীন সুবিধাভোগ আর দুঃসময়ে পলায়ন এটাই প্রমাণ করে ছাত্রলীগের অনেক নেতা সুবিধাবাদী রাজনীতির অনুসারী। যাদের মূল লক্ষ্য ছিল ক্ষমতার মোহে রাজনৈতিক উত্থান। কিন্তু যখন বিপদে পড়েছে তখন তাদের আত্মগোপন রাজনৈতিক বিশ্বাসহীনতার প্রকাশ। এমন সংস্কৃতি ছাত্র রাজনীতিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।
Share this content:
Post Comment