টোকাই থেকে কোটিপতি শ্রমিক লীগ সভাপতি মুসলেম গ্রেফতার

টোকাই থেকে কোটিপতি হওয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় রিকশা-ভ্যান শ্রমিক লীগের সভাপতি মুসলেম মিয়াকে (৪৯) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তিনি আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় আখাউড়া রেলওয়ে স্টেশন এলাকার অপরাধ জগতের সিন্ডিকেট প্রধান ও মাদক চোরাচালানের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন।
Advertisement
এক সাধারণ ভ্যানচালক থেকে ১০ বছরে বিপুল অর্থবিত্তের মালিক বনে যান।
রোববার দুপুরে তাকে আদালতে পাঠায় পুলিশ। এর আগে শনিবার রাতে পৌর শহরের উপজেলা কমপ্লেক্স সংলগ্ন নিজ বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ২৬ সেপ্টেম্বর মারামারি, অগ্নিসংযোগ ও বিস্ফোরক আইনের ধারায় আখাউড়ায় একটি মামলা হয়। তিনি ওই মামলার আসামি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৩৫ বছর আগে বাবার সঙ্গে আখাউড়ায় আসেন মুসলেম মিয়া। বাবা ভাঙারি কুড়িয়ে বিক্রি করতেন। মুসলেম মিয়া ভ্যানগাড়ির ঠেলাশ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। পরে তিনি নিজেই ভ্যানগাড়ি চালানো শুরু করেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে পেশা পরিবর্তন করে আখাউড়া রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় মাদক বিক্রি শুরু করেন মুসলেম মিয়া।
এরপর তার ভাগ্যের চাকা ঘুরতে থাকে। ভ্যানচালক হিসেবে জীবিকা শুরু করলেও তিনি ছিলেন রেলওয়ে স্টেশন এলাকার অঘোষিত মাদক চোরাচালানের সম্রাট। কয়েক বছরের ব্যবধানে আলাদীনের চেরাগ পাওয়ার মতো রাতারাতি মুসলেম মিয়া রীতিমতো বিপুল অর্থ-সম্পত্তির মালিক বনে যায়।
এরপর উপজেলা রিকশা-ভ্যান শ্রমিক লীগ নামে ভুঁইফোড় সংগঠনের সভাপতি হয়ে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন মিছিল সমাবেশে শ্রমিক নিয়ে যোগদান এবং অর্থ খরচ করে মুসলেম মিয়া আলোচনায় ছিলেন। রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় অবৈধভাবে জায়গা দখল করে রিকশা-ভ্যান শ্রমিক লীগের অফিস করেন। সেখানে সন্ধ্যা নামলেই চলত অসামাজিক কার্যকলাপ। আর ওই অফিস থেকে স্টেশন এলাকার অপরাধ জগত নিয়ন্ত্রণসহ ট্রেনে করে মাদকের চালান পাঠানো হতো দেশের বিভিন্ন স্থানে। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে তিনি কিছু দিন গা-ঢাকা দিয়ে ছিলেন।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সাধারণ ভ্যান শ্রমিক থেকে কয়েক বছরে পৌরশহরের কলেজপাড়া এবং উপজেলা কমপ্লেক্স সংলগ্ন এলাকায় ৪টি জায়গার মালিক হয়েছেন তিনি। ২টি পাকা বাড়ি করেছেন। একটিতে তিনি থাকেন। আরেকটি ভাড়া দেওয়া। বাকি ২টি প্লট খালি রয়েছে। গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার ঘাটিয়ারা গ্রামে বেশ কিছু চাষের জমি কিনেছেন। পৈতৃক ভিটায় পাকা বিল্ডিং করেছেন। এছাড়াও নগদ টাকার মালিক হয়েছেন তিনি।
আখাউড়া থানার ওসি মোহাম্মদ আবুল হাসিম বলেন, মুসলেম মিয়া মারামারি, অগ্নিসংযোগ ও বিস্ফোরক আইনের মামলার আসামি। গ্রেফতারের পর তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
Share this content:
Post Comment