গৌরনদীর ইউএনও’র সামনেই বিএনপি নেতার লাঠিয়াল আচরণ

গৌরনদী (বরিশাল) সংবাদদাতা :
একটি অদ্ভুত ও শোচনীয় ঘটনার সাক্ষী হয়ে উঠল বরিশালের গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস কক্ষ। গত মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার দিকে নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ওসির উপস্থিতিতেই এক মুসল্লীকে স্ব-শরীরে আক্রমণ করে চর-থাপ্পর মারার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক বদিউজ্জামান মিন্টু বিরুদ্ধে। জনসমক্ষে এবং প্রশাসনের সর্বোচ্চ প্রতিনিধিদের চোখের সামনেই এই ভয়ংকর দৃশ্যের অবতারণা যেন গণতন্ত্রের মুখে এক নির্মম থাপ্পড়। সবই ঘটে নির্বিকার সরকারি অফিসের চার দেয়ালের ভেতর। বিভেদ ছিল শুধু একটি ধর্মীয় আমল নিয়ে।
মারধরের শিকার মুসল্লী মো. সামচু মৃধা (৫৭) এবং ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার দক্ষিণ বিল্বগ্রাম জামে মসজিদে দীর্ঘদিন ধরে আজান ও একামতের আগে মুসল্লীরা দুরুদ পাঠ করে আসছিলেন। সম্প্রতি এ রীতি নিয়ে মুসল্লীদের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দিলে এর দুটি পক্ষ তৈরি হয়। ওই বিরোধ নিরসনের জন্য গত মঙ্গলবার উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে উভয় পক্ষকে আলোচনায় বসানো হয়। বৈঠকে দুরুদ পাঠের বিপক্ষে অবস্থানকারীদের পক্ষে ছিলেন বিএনপি নেতা বদিউজ্জামান মিন্টু এবং পক্ষে ছিলেন সরকারি কলেজের প্রভাষক মমতাজ খানম। এসময় আলোচনা চলাকালে “এক সপ্তাহের মধ্যে ওসি গিয়ে স্থানীয় মুসল্লীদের মতামতের ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। এর মধ্যে দুরুদ পাঠ বন্ধ থাকবে বলে ইউএনও সিদ্ধান্ত দেন।
তবে আলোচনার এক পর্যায়ে মসজিদের ইমাম নিয়ে কথা উঠলে মুসল্লী সামচু মৃধা “ইমাম আজীবন থাকবে” বলে মন্তব্য করলে তখনই মেজাজ হারান বদিউজ্জামান মিন্টু। প্রকারান্তরে ইউএনও এবং ওসির উপস্থিতিতেই মিন্টু চাড়াও হয়ে মুসল্লী শামচু মৃধাকে চড়থাপ্পর মারতে থাকেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মিন্টুর সাথে তার অনুসারীরা হামলায় অংশ নেয়। পরিস্থিতি তখন এতটাই উত্তপ্ত হয়ে উঠে যে বাধ্য হয়ে ওসি তাকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসেন, তবে ওই আক্রমণে ওসির ডান হাতের আঙুলে রক্তক্ষরণ হয়।
মারধরের শিকার মুসল্লী সামচু মৃধা জানান, “মিন্টু আমাকে ৪/৫টি চড়থাপ্পর মারেন এবং তার সহযোগীরা আমাকে টেনে হিচড়ে কক্ষের বাইরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। আমি যদি ওসির সাহায্য না পেতাম, তবে হয়তো আমাকে আরো মারতো হতো।” তিনি আরও বলেন, “এ সময় আমার পাঞ্জাবীও ছিঁড়ে ফেলা হয়।”
অভিযোগটি সম্পুর্ন মিথ্যা ও ভিত্তিহীন দাবী করে গৌরনদী উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক মো. বদিউজ্জামান মিন্টু বলেন, ইমাম আজীবন থাকবে বলে মুসল্লী শামচু মৃধা ঔধত্ত্বপূর্ন আচরণ করেন। এ কারণে তার উপর সবাই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। এ সময় সেখানে একটি উত্তপ্ত অবস্থার সৃষ্টি হয়।
গৌরনদী থানার ওসি মো. ইউনুস মিয়া বলেন, মুসল্লী শামচু মৃধার বলা কথায় তার উপর সবাই ক্ষিপ্ত হয় এবং সেখানে উত্তপ্ত অবস্থার সৃষ্টি হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিফাত আরা মৌরি বলেন, ‘মুসল্লীর উক্তিকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ে এক পর্যায়ে জামার কলার ধরার মত ঘটনা ঘটেছে, মারধর করার কোন ঘটনা ঘটেনি। তবে যেটা হয়েছে এটাও কাম্য নয়’।
এখন জনমনে প্রশ্ন থেকে যায় এই ‘জামার কলার ধরার মত ঘটনা’র দায় কে নেবে? একজন সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসল্লী যদি সরকারি অফিসে এসে অপমানিত, লাঞ্ছিত, রক্তাক্ত হয়ে ফিরতে হয় তাহলে এ সমাজের ন্যায়বিচার কোথায়? কোথায় প্রশাসনের দায়িত্ব?
Share this content:
Post Comment